দীর্ঘ ৭২ বছর পর অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত এই দেশে খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে একটি কলেজের নাম পরিবর্তন হলো।
মাদারীপুরে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি গভর্নর খাজানা নাজিমউদ্দিনের নামে নামকরণকৃত মাদারীপুরের ‘সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজে’র নাম বদলে ‘মাদারীপুর সরকারি কলেজ’ করা হয়েছে। কলেজের নাম পরিবর্তন করে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) কলেজটির অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. হরুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরোও উল্লেখ থাকে ‘২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষ থেকে ‘সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজ’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘ ‘মাদারীপুর সরকারী কলেজ, মাদারীপুর’ করা হলো। কলেজ পরিদর্শক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা নাম পরিবর্তনের আদেশ জারি করলাম। মঙ্গলবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ আদেশ কার্যকর হলো।
উল্লেখ্য, গভর্নর খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে ১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালের ৭ মে কলেজটি সরকারি হয়।
জানা গেছে, এই কলেজটির নাম পরিবর্তন নিয়ে গত কয়েক দশক মাদারীপুর ছাড়াও দেশের অসংখ্য বিশিষ্টজন দাবি করে আসছেন। প্রত্যেকেরই একটি দাবি ছিল, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত এই দেশে ‘খাজা নাজিমউদ্দিন’-এর নামে সরকারী কলেজের নাম থাকে কিভাবে? কেন এখনও পরিবর্তন করা হয়নি? যে দেশে ভাষার জন্য যুদ্ধ হয়, মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য লড়াই করেন, সেই দেশে একজন ভাষাবিদ্বেষীর নামেই স্কুল কেন?
দেশের বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলে আরও বলেছেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের রক্ত ঝরলেও খাজা নাজিমউদ্দিনের অবস্থান ছিল বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। তিনি ১৯৪৮ সালেই মাদারীপুরে নিজের নামে কলেজের নামকরণ করেন।
১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করেননি। ঢাকার নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করা একজন বাঙালী রাজনীতিবিদ (পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৪৮-১৯৫১) হয়েও বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। আর এর পরেই ঘটনার ধারাবাহিকতায় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ হলো এবং বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। সেই বিতর্কিত খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে স্বাধীন বাংলাদেশে কলেজের নাম রয়েই যায়।
আজকে নাম পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি নাম পরিবর্তনের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যেখানে শাজাহান খান নাজিমউদ্দিন কলেজের নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দাদা শেখ লুৎফর রহমানের নামে করার প্রস্তাব করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি দেননি কিন্তু নাজিমউদ্দিনের নাম পরিবর্তনে গত বছরই সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ মাদারীপুর বাসী খুশি তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি রইল মাদারীপুর বাসীর সীমাহীন ভালবাসা।